ই-পাসপোর্ট করার সহজ ১০ টি উপায়
ভূমিকা:
বর্তমানে পুরনো MRP পাসপোর্ট এর পরিবর্তে ই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। আর আপনি চাইলেও এখন আর এম আর পি পাসপোর্ট তৈরি করতে পারবেন না,পাসপোর্ট রিনিউ অথবা নতুন করে ইস্যু করার ক্ষেত্রে আপনাকে ই পাসপোর্ট দেওয়া হবে।
এশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ ই পাসপোর্ট সেবা চালু হয়। বর্তমানে দালাল ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট এর আবেদন করতে পারবেন। ভোটার আইডি কার্ড কিংবা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে খুব সহজে ই পাসপোর্ট আবেদন করা সম্ভব। সাধারণত পাসপোর্ট এর ধরন অনুযায়ী ডকুমেন্ট ভিন্ন হয়।
ই পাসপোর্ট এর ধরন সমূহ :
- শিশুদের পাসপোর্ট।
- প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট।
- সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট।
আবেদনকারীর বয়স হিসেবে পাসপোর্ট এর ধরন ভিন্ন হয়। তাছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডকুমেন্ট হিসেবে NOC এবং GO প্রয়োজন হয়। এ ধরনের পাসপোর্টকে government order পাসপোর্ট বলা হয়।
ই-পাসপোর্ট তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপকরণ :
ই পাসপোর্ট করতে হলে প্রথমে আপনাকে আবেদন করতে হবে, পাঁচ বছর কিংবা ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হয়। এবং যাদের বয়স ২০ বছরের নিচে, তাদের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হবে। এছাড়াও পিতা-মাতার আইডি কার্ড সহ নাগরিক সনদপত্র প্রয়োজন হবে।
পেশা প্রমাণ এর জন্য স্টুডেন্ট হলে শিক্ষা কার্ড এবং চাকরিজীবী হলে চাকরিজীবী কার্ড প্রয়োজন।সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য NOC এবং GO প্রয়োজন হবে। অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ফি পরিশোধ করে, চালান রশিদ ও 3R size ছবি প্রয়োজন হবে।
ই-সপোর্ট এর আবেদনের নিয়ম :
অনলাইনে একাউন্ট খুলে খুব সহজে ই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়। আবেদন জমা দেওয়ার দিন-তারিখ অনলাইনে পাওয়া যাবে।কাগজপত্রেও লাগছে না কোন সত্যায়ন। প্রথমে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ ই পাসপোর্ট পোটালে। ওয়েবসাইটে ঢুকে ডিরেক্টলি টু অনলাইন এপ্লিকেশনে ক্লিক করতে হবে।সেখানে শুরুতেই অ্যাপ্লাই অনলাইন ফর ই পাসপোর্ট/রি- ইস্যু বাটনে ক্লিক করে সরাসরি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।
তবে আবেদন করার আগে দেখে নিতে হবে, ই পাসপোর্ট আবেদনের পাঁচটি ধাপ। প্রথম ধাপে বর্তমান ঠিকানা জেলা শহরের নাম ও থানার নাম নির্বাচন করে ক্লিক করতে হবে।পরের ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত ই পাসপোর্ট এর মূল ফর্মটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। তৃতীয় ধাপে মেয়াদ ও পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুযায়ী ফ্রি জমা দিতে হবে।
এক্ষেত্রে যেকোনো ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া যায়।এ ছাড়া অনুমোদিত পাঁচ ব্যাংকের যেকোনো একটিতে টাকা জমা দিয়ে সেই জমা স্লিপের নম্বর নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।সব কাজ শেষ হলে ফাইনাল সাবমিট করতে হবে।এরপর আপনার তথ্য গুলো পাসপোর্টের কার্যালয়ের সার্ভারে চলে যাবে।
ই-পাসপোর্ট তৈরিতে খরচ সমূহ:
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণ (২১কর্ম দিবস) ফি ৪ হজার ২৫ টাকা, জরুরি(১০ কর্ম দিবস)ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতীব জরুরি (২ কর্ম দিবস) ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা,জরুরি ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা,জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।
সব ফির সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। ১৮ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীরা কেবলমাএ ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পাবে।অতি জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন সঙ্গে আনতে হবে।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা :
ই- পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে,এর মাধ্যমে ই- গেট ব্যবহার খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন।ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হব না।এর মাধ্যমে ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে।ই- গেটের নিদিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরায় ছবি তুলে নেবে।থাকবে আঙ্গুলের ছাপ যাচাইয়ের ব্যবস্থা।সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পরিয়ে যেতে পারবেন।কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে,সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।
বয়স অনুযায়ী পাসপোর্ট প্রয়োজনিও ডকুমেন্ট :
- শিশুদের পাসপোর্টঃ
শিশুদের পাসপোর্ট আবেদন করতে অবশ্যই পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের কপি অথবা অনলাইন জম্ম নিবন্ধন সনদপত্র প্রয়োজন হবে।যেহতু শিশুর (২০ বছরে নিচে) ভোটার আইডি কার্ড নেই,সেহেতু অবশ্যই গার্ডিয়ানের ডকুমেন্ট প্রয়োজন।
তবে যারা ১৮ বছরের উপরে,যাদের আইডি কার্ড আছে,তাদের ডকুমেন্ট ব্যতীত পাসপোর্ট জন্য আবেদন করতে পারবে।সাধারণত তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ক্যাটাগরির মধ্যে ধরা হয়।
- প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট :
সাধারণ যাদের ভোটার আইডি কার্ড আছে তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের তালিকায় ধরা হয়।প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন হবে।তাছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে গার্ডিয়ানের ডকুমেন্টের প্রয়োজন নেই।
- সরকারি চাকরিজীবিদের পাসপোর্ট :
সরকারি চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকের থেকে(NOCও GO) এই দুইটা ডকুমেন্ট বেশি প্রয়োজন হবে। যারা রাষ্ট্রীয় কাজে সরকারি আদেশ দ্রুত দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট আবেদন করবে,তাদের ক্ষেত্রে GO( Government Order) প্রয়োজন।
এবং সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট এর আবেদন করলে,তার মন্ত্রণালয় কিংবা অভিদপ্তর থেকে NOC(No Objection Certificate) ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে।এই ডকুমেন্টগুলো ব্যতীত সরকারি চাকরিজীবিদের অন্য কোন ডকুমেন্ট প্রয়োজন নেই।
পরামর্শ :
কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই এবং দালান ছাড়াই আমরা খুব সহজে ঘরে বসে ই- পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন । এতে করে সময় ও কম লাগবে। আর খরচও কম হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url