মানসিক রোগের লক্ষণ সমূহ ও রোগ মুক্তির উপায়
ভূমিকা:
বর্তমানে মানসিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্লোবালাইজেশন। গ্লোবালইজেশনের প্রভাবে আমরা সবকিছু ঘরের মধ্যেই পেয়ে যায়ই।যার ফলে,মানুষ মানুষের সংস্পর্শে খুব কমই আসছে।পারস্পারিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। মানুষেরা একাকিত্বে ভুগছে।একারণে,মানসিক ভাবে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। এছাড়া,দেখা গেছে সম্প্রতি করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বে আইসোলেশনের ফলে মানসিক ভাবে অনেকেই একাকিত্বের কারণে ভেঙে গেড়েছে। করোনা মহামারিতে মানসিক রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি দেখা গেছে।
মানসিক রোগের ধরন সমূহ:
মানসিক রোগ হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক রোগ হচ্ছে একজন ব্যক্তির সুস্থ ভাবে চিন্তা করতে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সঠিক ভাবে আচরণ করতে পারে না।মানসিক রোগ দুই ধরনের :
- মৃদু ধরনের মানসিক রোগ: এক্ষেত্রে জীবনের স্বাভাবিক অনুভূতিগুলো (দুঃখবোধ,দুশ্চিন্তা ইত্যাদি) প্রকট আকার ধারণ করে।
- তীব্র ধরনের মানসিক রোগ : এক্ষেত্রে আচার-আচারণ কথা-বার্তা স্পষ্টভাবে অস্বাভাবিক হয়। ফলে আশেপাশে মানুষেরা বুঝতে পারে।
মানসিক রোগের লক্ষণ সমূহ:
যারা মানসিক রোগী তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যেটা তার স্বাভাবিক জীবন থেকে একদম উল্টো।
- মৃদু ধরনের মানসিক রোগ: এ ক্ষেত্রে যে সব লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হচ্চে, অহেতুক মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা-ভয়ভীতি,মাথাব্যথা, মাথাঘোরানো, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট,বুক ধরফর করা,অশান্তি, কাজে মন না বসা,ঘুম না হয়া,আত্মহত্যার করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া,ইত্যাদি।.
- তীব্র ধরনের মানসিক রোগ: এক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ গুলো দেখা যায় তা হচ্ছে: অহেতুক মারামারি, ভাংচুর করা,গভীর রাতে বাড়ির বাইরে চলে যাওয়া,আবোল-তাবোল বলা,ঠিক মতো ঘুম না হওয়ায়, খাওয়া -দাওয়া ঠিক মতো না কর,ইত্যাদি।
মানসিক রোগী চেনার উপায়:
একজনের মধ্যে মানসিক রোগের লক্ষণ দেখতে পাওয়া মানে তিনি মানসিক রোগী এরকম সবসময়ই না ভাবা উত্তম।কারণ মানুষের মন ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায়।ভালো লাগা মন্দ লাগা থাকতেই পারে।হঠাৎ করে মন খারাপ হবে,আবার কিছুক্ষণ পরে মন ভালো হয়ে যাবে এরকমটা স্বাভাবিক। একজনকে মানসিক রোগী হিসাবে আমার তখনই ভাববো যখন উপরে লক্ষণ গুলো তার মধ্যে দীর্ঘ স্থায়ী হবে।
দিনের পর দিন যখন একজন মানুষ তার জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলো অস্বাভাবিক উপায় করে থাকবে।অনেকক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও কিছু উপর্সগ দেখা দিতে পারে।যেগুলো চেক-আপ করার পরেও বোঝা যায় না যে আসলে কেন শারীরিক সমস্যাটা দেখা দিল।আসলে এই সমস্যাটি হয়ে থাকে অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণে। তাই এবিষয়ে বলতে হয় মানসিক রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই ব্যক্তি সবসময় মানসিক নাও হতে পারে।
মানসিক রোগীর খাবার:
আমরা প্রায় সবাই জানি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে, এমনকি খাবারের নাম আমরা সহজে বলতে পারি। কিন্তু খাবারও যে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে এটা আমরা অনেকে জানি না। মানসিক রোগীর খাদ্য তালিকায় সর্বপ্রথম নজর দিতে হবে সুষম খাবারের দিকে। সুষম খাবারে সব রকমের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।নিয়মিত যেসব খাবার খেলে মানসিক রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। সেগুলো হলো:
- দানাশস্য জাতীয় খাবার।
- সবুজ শাকসবজি।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন-ভিটামিন-A,C,E
- টক জাতীয় ফল-ফলাদ।
- ডার্ক চকলেট।
- ভিটামিন ডি যার অন্যতম উৎস সূর্যের আলো।
- বাদাম জাতীয় খাবার।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন।
- ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাদ্য।
- ওমেগা-3 জাতীয় ফ্যাটি এসিড।
উপরের এই খাবারগুলো একজন মানসিক রোগীকে খাওয়ানো উচিত। এ খাবারগুলো মানসিক বিভিন্ন সমস্যা কমিয়ে ব্রেইনের এক্টিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীর এবং মন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক রোগ থেকে বাঁচার উপায় :
তাহলে বুঝা গেল আমরা যাদেরকে মানসিক রোগী ভাবি তারা ছাড়াও আরো অনেকেই মানসিক রোগে আক্রান্ত। মানসিক রোগ থেকে বাঁচার জন্য প্রথমে প্রয়োজন দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি এবং ভালোভাবে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা। নিম্নলিখিত কিছু পরামর্শ মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কার্যকারী হতে পারে-
- দক্ষ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করান।
- ভারসাম্যপূর্ণ ও স্থানীয় দৈনন্দিন তালিকা মেনে চলুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান।
- বিশ্রাম ও আরাম করার জন্য সময় নিন।
- পুষ্টিকর এবং সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
- ধূমপান ও মদ্যপান সহ যাবতীয় নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন।
- নিজেকে সবার থেকে আলাদা করা থেকে বিরত থাকুন।
- ধর্মীয় কাজে সময় দিন।
- পর্নোগ্রাফি দেখা পরিহার করুন।
পরামর্শ :
আমাদের জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসবেই। এটা স্বাভাবিক। দুঃখ-কষ্ট আসলেই আমাদের ডিপ্রেশনে চলে যতে হবে এমনা। এমন সময় আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। যে সমস্যা হয়েছে তার মোকাবেলার করার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আমরা জীবনে উন্নতি করতে পারব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url