সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সজনে পাতার ব্যবহার
ভূমিকা
আমাদের সুসাস্থের জন্য সজিনা পাতার গুরুত্ব অপরহিসিম। স্বাস্থ্য রক্ষাই সজিনা পাতা বিশেষ ভাবে কাজ করে থাকে।
সজিনা পাতার উপাদান:
ভিটামিন সি,ক্যালসিয়াম ,প্রোটিন, ভিটামিন এ , পটাশিয়াম ইত্যাদি প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর,যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতা সহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতি জনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সজিনা পাতা:
উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে সজনে পাতা। কারণ, এই পাতার মধ্যে পটাশিয়াম রয়েছে যথেষ্ট মাত্রায়। তা ছাড়া, এই পাতায় যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি যৌগ থাকায় তা সামগ্রিক ভাবে হৃদযন্ত্র ভাল রাখতে সাহায্য করে। সজনে পাতা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।সজনে গাছের গুণের শেষ নেই। এই গাছের নানা অংশ বিভিন্ন ঔষধি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সজনে পাতা।
এই পাতা ম্যালেরিয়া, জ্বর, উচ্চ রক্তচাপ , ডায়াবেটিস , পরজীবী রোগ এবং অন্যান্য অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।গবেষণায় দেখা গেছে সজনে পাতায় ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। এসব উপাদানে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সজনে পাতা রাখলে আরও যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়।হৃৎপিণ্ডের জন্য ভাল।
সজনে পাতায় কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ক্ষমতা রয়েছে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কম হয়। জিঙ্কের একটি বড় উৎস হল সজনে পাতা। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস: সজনে পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন কোয়ারসেটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এই পাতার গুঁড়া রক্তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়াতে পারে।
স্বাস্থ্যকর ত্বক:
সজনে পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বকের যত্নের জন্য আদর্শ। উন্নতি করে ঘুম এবং পুষ্টি উভয়ই একে অপরের উপর প্রভাব ফেলে। দৈনিন্দিন খাদ্যতালিকায় সজনে পাতার মতো শক্তিশালী খাবার অপরিহার্য কারণ এই পাতা শক্তি বাড়ায়, শরীরকে ভিটামিন দিয়ে ফ্লাশ করে এবং প্রদাহ কমায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধি:
ভিটামিন ডি,যেমন-নায়াসিন রিবোফ্লোবিন, এবং ভিটামিন বি১২ এর একটি দুর্দান্ত উৎস যা হজমে যেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভিটামিন বি খাবারগুলো দ্রুত ভেঙে ফেলে, যার ফলে দ্রুত হজম হয় খাবার। এতে রয়েছে কন্টেনডাইটারি ফাইবার যা দ্রুত খাবার হজম প্রক্রিয়ার কাজ করে থাকে।সজনে পাতা খাওয়া হজমের সমস্যায় সাহায্য করতে পারে। আলসারেটিভ কোলাইটিস, গ্যাস্ট্রাইটিস, ফোলাভাব এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের ডায়েটে সজনে পাতা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
লিভারের সুরক্ষা:
শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে লিভার। জানলে অবাক হবেন,যে শরীর থেকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়া থেকে শুরু করে হজমে সাহায্যকারী উৎসেচক তৈরি, বিপাকের হার নিয়ন্ত্রণ সহ একাধিক কাজ করে থাকে যকৃত। তাই সুস্থ-সবল জীবন কাটাতে চাইলে আমাদের এই অঙ্গের স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে হবে। আর সেই কাজে আমাদের সাহায্য করবে অত্যন্ত উপকারী সজনে শাক।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
সজিনা পাতা তে উপস্থিত বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে এতে থাকা প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।তাই এটি ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। সজিনা পাতা পিত্তথলির কার্যকারিতা বাড়িয়ে থাকে যার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে , ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে।
সজিনা পাতার তরকারি:
সজিনা খাবার টেবিলে সবজি হিসেবেই বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সজিনা বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এ সময় সবজির মধ্যে সজিনার যথেষ্ট কদর থাকে। আগাম সজিনা বাজারে নিতে পারলে আর্থিকভাবে প্রচুর লাভবান হওয়া যায়। সজিনা দিয়ে ডাল তরকারিটি হল সবচেয়ে জনপ্রিয়। সজিনা শুধু ফল হিসেবেই নয় সজিনার কচি পাতা ও ডাঁটা বা ডাল ভাজি বা তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়।
পালংশাকের বিকল্প হিসেবে সজিনা শাক খাওয়া হয়। মুরগির মাংস রান্নায় কচি সজিনা পাতা সুস্বাদু লাগে। কালিজিরা, কাঁচামরিচ, রসুনের সাথে সজিনা পাতার ভর্তা একটি মজাদার খাবার। ছোট মাছের সাথে সজিনা পাতার চর্চড়ি খুবই মজার ,সজিনা পাতার বড়া, সালাদ, পাতা বাটা ও সজিনা পাতার পাউডার দ্বারা খাদ্য সুস্বাদু ও শক্তি বর্ধক হয়। যে কোনো স্যুপের সাথে শুকনা সজিনা পাতার পাউডার মিশালে খাদ্যমান বেড়ে যায়।
সজিনা পাতার চা:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে সজনে ডাঁটার তুলনা হয় না। শরীর চাঙ্গা রাখতে সারা বছরই চাইলে সজনে খেতে পারেন। ফুল বা ডাঁটা নয়, বাজারে সজনে পাতার গুঁড়া পাওয়া যায়। সেই গুঁড়া দিয়ে চা বানিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ,রোগ-বালাইয়ের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এই চায়ের আছে নানা গুণ। এতে আছে ব্যাকটেরিয়া সঙ্গে লড়ার বিশেষ ক্ষমতা।
বিশেষ করে ঠান্ডা লেগে বুক-গলায় সংক্রমণ হলে এই চা খেলে উপকার পেতে পাওয়া যাবে। তা ছাড়া, নানা ধরনের পুষ্টিগুণেও ভরপুর সজনে পাতা। এতে ভিটামিন এ, বি ১, বি২, বি৩ এবং সি রয়েছে। আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়ামও। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সজনে চায়ের মধ্যে ক্যানসার প্রতিরোধের গুণ রয়েছে। পাকস্থলীর ক্যানসার, লিভার ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা রয়েছে এই চায়ের।
- লিভারের যত্নে:
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মদ্যপান, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়মের কারণে অল্প বয়সেই লিভারের অসুখ বাসা বাঁধছে শরীরে। সজনে পাতায় ভালো মাত্রায় পলিফেনল থাকে, যা যকৃতকে যেকোনো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।গ্যাস অম্বলের সমস্যা কমাতে: সারা বছর গ্যাস অম্বলে ভোগেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও প্রতিদিন সকালে সজনে চায়ে চুমুক দিতে পারেন।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। সজনে পাতায় ভালো মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে। রোজ নিয়ম করে সজনে চায়ে চুমুক দিলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে। রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে এই চা।
- চোখ ভালো রাখতে: বয়স বাড়লে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, তা ছাড়া সারা ক্ষণ মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে অল্প বয়সেই চোখের বারোটা বাজছে,সজনে পাতায় ভিটামিন এ ভালো মাত্রায় থাকে। চোখ ভালো রাখতেও নিয়মিত সজনে চায়ে চুমুক দিতে পারেন।
সজিনা পাতার পাউডার:
সজিনা পাতার পাউডার খুবই উপকারী,সজিনার পাতা (Moringa Leaf) অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। বিশেষজ্ঞরা অত্যাধিক পুষ্টিগুনে ভরপুর সজিনা গাছকে “মিরাকেল টি” এবং এর পাতাকে “সুপার ফুড” বলে থাকেন। সজিনা পাতার পুষ্টিগুন বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা এর পাতা থেকে এক ধরণের পুষ্টিসমৃদ্ধ গুড়া তৈরি করেন। সজিনা পাতা শুকিয়ে বিশেষ উপায়ে এই গুড়া তৈরি হয়।
স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিগুনে ভরপুর এই গুড়ার বিশেষত্ব হলো যারা সজিনা পাতা খেতে পারেন না কিংবা সজিনা পাতা সরবরাহে পাতার গুনাগুন বিনষ্ট হয় তাদের জন্য তৈরি এটি অনেক উপকারি। এতে অত্যাধিক মাত্রায় ভিটামিন-এ,ভিটামিন-বি,আয়রন,জিংক,আয়োডিনসহ দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ এবং পর্যাপ্ত অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এইগুড়া প্রতিদিন খেলে হাজারও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সজিনা পাতা গুড়ার উপকারিতা :
সজিনা পাতার বা মরিঙ্গার গুড়ায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন এতে পাওয়া যায়। যা আমাদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য রক্ষা ও গঠনে খুবই কার্যকরী।সজিনা পাতা্র গুড়ায় দুধের থেকে অধিক পরিমানে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।এই ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের হাড় ও দাতের জন্য খুব উপকারী।এতে থাকা আয়রন রক্তশূণ্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড মরিঙ্গার গুড়ায় বিদ্যমান।মরিঙ্গা গুড়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের পাকস্থলি ও লিভার সুস্থ থাকে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সজিনা পাতার জুড়ি নেই। তাই নিয়মিত সজিনা পাতার গুড়া খেলে আমরা ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে পারি।সজিনা পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের যৌনক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।মরিঙ্গা গুড়া উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করতে খুব উপকারি।
সজিনা পাতায় বিদ্যমান ভিটামিন-এ এবং ই আমাদের চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে ব্যাপক ভুমিকা রাখে। গুড়া ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে খুব সাহায্য করে।মহিলাদের ঋতুস্রাবকালীন এই গুড়া বেশ কার্যকরী। মার্টের মরিঙ্গা গুড়ার বিশেষত্বসজিনা পাতার গুড়া সম্পূর্ন প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি।বাছাইকৃত সজিনা পাতা থেকে বিশেষ উপায়ে তৈরি।শুকনো পাতা থেকে গুড়া করা সময় দৃঢ় পর্যবেক্ষণ।সম্পূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্য কার্যকরী।সজিনা পাতা সেবন অনীহার উত্তম বিকল্প।
পরামস্য
সজিনা পাতার অনেক গুনাগুন রয়েছে যা আমরা উপরের অংশ গুলো পড়ে বুঝতে পারছি । আশা করছি আপনারা সবাই এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরকম আরও পোস্ট পেতে হামিম ব্লগার এর সাথে থাকুন। এই পোস্টটি পড়ার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url