নিম পাতার দশটি উপকারিতা ও ঔষুধি গাছ হিসেবে এর ব্যবহার
ভূমিকা
নিম আামদের অতি পরিচিত একটি গাছ। সকল রোগের মহাঔষুধ নামে কিন্তু বেশ পরিচিত।
ঔষধি গাছ হিসেবে এর ডাল, পাতা, রস সবটাই কাজে লাগে। নিম একটি বহু বর্ষজীবি, ও চির হরিত বৃক্ষ। নিমের পাতা থেকে এখন প্রসাধনীও তৈরি হচ্ছে। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকরি।
নিম গাছেরউ পকারিতা ও গুণাগুণ
- ম্যালেরিয়া থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার:
নিমের নির্যাস ব্যবহারে ম্যালেরিয়া প্রশমিত হয়। পানি বা এলকোহল মিশ্রিত নিম পাতার নির্যাস ব্যবহারে একই ধরনের ফল পেয়ে থাকে।
,,মানসিক চাপ ও অশান্তিঃ অল্প পরিমাণ নিম পাতার নির্যাস খেলে মানসিক চাপ ও মানসিক অশান্তি কমে যায়,
- আলসারঃ
নিম পাতার নির্যাস ও নিম বীজ হতে নিম্বিডিন নির্যাস খেলে পেপটিক ও ডিওডেনাল আলসার উপশম হয়।
- বসন্তঃ
কাঁচা হলুদের সাথে নিম পাতা বেটে বসন্তের গুটিতে দিলে গুটি দ্রুত শুকিয়ে যায়। এছাড়া জন্ডিসে ২৫-৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস একটু মধুর সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস আরোগ্য হয়,
- বহুমূত্র রোগে;
প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ নিম পাতার রস সকালে খালি পেটে ৩ মাস খেলে ডায়বেটিস আরোগ্য হয়ে থাকে। প্রতিদিন সকালে ১০টি নিম পাতা গুড়া বা চিবিয়ে সেবন করলে ডায়বেটিস ভাল হয়,নিম পাতার রস খেলে ৩০-৭০% ইনসুলিন নেয়ার প্রবণতা কমে যায়,
- চোখের ব্যথাঃ
নিম পাতা সামান্য শুষ্ক আদা ও সৈন্ধব লবণ একত্রে মিলিয়ে সামান্য গরম করে একটি পরিস্কার পাতলা কাপড়ে লাগিয়ে তা দ্বারা চোখ ঢেকে দিলে চোখের স্ফীতি ও ব্যাথা সেরে যায়,,
- এইডস থেকে মুক্তি পেতে :
নিম গাছের বাকল হতে আহরিত নির্যাস এইডস ভাইরাসকে মারতে সক্ষম। নিম পাতার নির্যাস অথবা পুরু পাতা অথবা নিম পাতার চা পান করলে এইডস উপশম হয়।
- হৃদরোগঃ
নিম পাতার নির্যাস খেলে হৃদরোগে উপকার পাওয়া যায়। নিমের নির্যাস ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টোরল কমায়। রক্ত পাতলা করে, হার্টবিট কমিয়ে থাকে।
- কৃমি নাশকঃ
৩-৪গ্রাম নিম ছাল চূর্ণ সামান্য সমপরিমাণ সৈন্ধব লবণসহ সকালে খালি পেটে সেবন করে গেলে কৃমির উপদ্রব হতে রক্ষা পাওয়া যায়। নিয়মিত এক সপ্তাহ সেবন করে যেতে হব। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ গ্রাম মাত্রায় সেবন করতে হবে।
- দাঁতের যত্নঃ
কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভাল থাকে, নিম পাউডার দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ও মাঁড়ি ভাল থাকে। নিম পাতার নির্যাস পানিতে মিশিয়ে বা নিম দিয়ে মুখ আলতোভাবে ধুয়ে ফেললে দাঁতের আক্রমণ, দাঁতের পচন, রক্তপাত ও মাড়ির ব্যথা কমে যায়।
- ব্রণ দূরীকরণে ব্যবহার: নিম পাতা পেষ্ট করে মধুর সাথে মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ব্রণ সেরে যায়।
- ক্যান্সারের চিকিৎসা:নিম তেল, বাকল ও পাতার নির্যাস ব্যবহারে ক্যান্সার-টিউমার, স্কীন ক্যান্সার ইত্যাদি ভাল হয়।
- রাতকানাঃ নিম ফুল ভাজা খেলে রাতকানা উপশম হয়,
- উকুনঃ নিমের ফুল বেটে মাথায় মাখলে উকুন মরে যায়। চুল সুন্দর ও ঝলমলে করে।
- বমিঃ বমি আসতে থাকলে নিম পাতার রস ৫-৬ ফোঁটা দুধ দিয়ে খেলে উপশম হয়।
- খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষত সারাতে ব্যবহার:
নিম পাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে খোস-পাঁচড়া ও পুরোনো ক্ষতের উপশম হয়। নিম পাতা ঘিয়ে ভেজে সেই ঘি ক্ষতে লাগালে ক্ষত অতি সত্বর আরোগ্য হয়।
- মাথা ব্যাথায় ব্যবহার:নিমের তেল মাখলে মাথা ধরা কমে যায়।
- নিম চাঃ শুকনো নিম পাতা গুঁড়ো অথবা তাজা নিমের কয়েকটা পাতা গরম পানিতে ছেড়ে ২/৩ মিনিট জ্বাল দিয়ে মধু মিশিয়েই বানিয়ে ফেলা যায় সুমিষ্ট নিম চা, তবে নতুনদের জন্য সময়সীমা ১ মিনিট। যত বেশি জ্বাল দিবেন তত তিতা হবে।
- নিমের ঔষধি গুনাগুন:ব্যবহার্য্য অংশঃপাতা, ফল, ছাল বা বাকল, নিমের তেল,বীজ ইত্যাদি এক কথায় নিমের সমস্ত অংশ ব্যবহার করা যায়।উদ্ভিদের ধরণ অনুযায়ী নিম একটি বহু বর্ষজীবি ও চির হরিত বৃক্ষ।
ঔষধি গুণাগুণ
বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ইত্যাদি ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নিমের কদর তা কিন্তু এর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যহারের জন্য, নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে ভাইরাসরোধক হিসেবে এবং কীট-পতঙ্গ বিনাশে গ্যাস রোধ নিয়ন্ত্রণে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে ও,দন্ত চিকিৎসায় ব্যাথামুক্তি ও জ্বর কমাতে, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয় অনেক সময়।
নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে স্নান করলে খোসপাচড়া চলে যায়। নিম পাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষতের উপশম হয়। নিম পাতা ঘিয়ে ভেজে সেই ঘি ক্ষতে লাগালে ক্ষত অতি সত্বর আরোগ্য হয়।পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়। পাতা ভেজে গুড়া করে সরিষার তেলের সাথে মিষিয়ে চুলকানিতে লাগালে যাদুর মতো কাজ হয়।
কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহার
আমরা দেখি ,পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়, পেট বড় হয়। চেহারা ফ্যকাশে হয়ে যায়, এ অবস্থায় বাচ্ছাদের পেটের কৃমি নির্মূল করতে নিমের পাতার জুড়ি নেই। শিশুরাই বেশি কৃমিতে আক্রান্তের শিকার হয়। এ জন্য ৫০ mg পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুড়া দিনে ৩ বার সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে পানি সহ সহ খেতে হবে। আবার ৩-৪ gm নিম ছাল চূর্ণ করে সামান্য পরিমাণ সৈন্ধব লবণসহ সকালে খালি পেটে সেবন করে গেলে কৃমির উপদ্রব হতে রক্ষা পাওয়া যায়; নিয়মিত এটি এক সপ্তাহ সেবন করে যেতে হব। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ গ্রাম মাত্রায় সেব্য।
ত্বকের যত্নে ব্যবহার
,,বহুদি ধরে রূপচর্চায় নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন।ত্বকের দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে, বড় ডালাতে ফ্যানের বাতোসে একদিন রেখে দিন। পরদিন রোদে শুকাতে দিন। নিমের বড়ির জল একেবারে শুকিয়ে এলে এয়ারটাইট বয়ামে করে সংরক্ষণ করুন।
আবার ঘরে তৈরি নিমের বড়িও খাওয়া যেতে পারে। বড়ি তৈরি করতে নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে বেটে নিন। এবার হাতে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করুন নিমপাতা ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী। তাই ত্বকের সুরক্ষায় এর জুড়ি নেই। ব্রণের সংক্রমণ হলেই নিমপাতা থেঁতো করে লাগালে ভালো ফল নিশ্চিত। মাথার ত্বকে অনেকেরই চুল্কানি ভাব হয়, এ নিমপাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগালে এই চুলকানি কমে।
নিয়মিত নিমপাতার সাথে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগাতে পারেন এতে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়। তবে হলুদ ব্যবহার করলে রোদ এড়িয়ে চলাই ভালো। নিমপাতার চেয়ে হলুদের পরিমাণ কম হবে, এছাড়া নিমপাতা সিদ্ধ জল গোসলের জলর সাথে মিশিয়ে নিন। যাদের স্কিন ইরিটেশন এবং চুল্কানিভাব আছে তাদের এতে আরাম হবে আর গায়ে দুর্গন্ধের ব্যাপারটাও কমে যাবে আশা করা যায়,,
দাতের রোগ
দাঁতের সুস্থতায় নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করার প্রচলন রয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই,নিমের পাতা ও ছালের গুড়া কিংবা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাত মাজলে দাঁত হবে মজবুত, ও রক্ষা পাবেন দন্ত রোগ থেকেও। বুকে কফ জমে গেলে নিম পাতা বেটে এর ৩০ ফোঁটা রস সামান্য গরম জলতে মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার খেলে উপকার পাওয়া যায়।কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভাল থাকে। নিম পাতার নির্যাস জলতে মিশিয়ে বা নিম দিয়ে মুখ আলতোভাবে ধুয়ে ফেললে দাঁতের আক্রমণ, দাঁতের পচন, রক্তপাত ও মাড়ির ব্যথা কমে যায়।।
রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে
জানলে অবাক হবেন,নিম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চমৎকার ভাবে কাজ করে থাকে ।নিমের পাতা রক্তের সুগার লেভেল কমতে সাহায্য করে,এছাড়াও রক্ত নালীকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন উন্নত করে। ভালো ফল পেতে নিমের কচি পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। সকালে খালি পেটে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা বেটে খেলে তা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে থাকে। সুস্থ সুন্দর উন্নত জীবন যাপনে নিমের ব্যবহারের জুড়ি নেই।
ওজন কমাতেও এর ঔষধি গুণ
যদি ওজন কমাতে চান বিশেষ করে পেটের তাহলে নিমের ফুলের জুস খেতে হবে আপনাকে নিয়ম করে। নিম ফুল মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে থাকে শরীরের চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। একমুঠো নিম ফুল চূর্ণ করে নিয়ে এর সাথে এক চামুচ মধু এবং আধা চামুচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই মিশ্রণটি পান করতে হবে। দেখবেন আপনার অনেক কাজ হবে।
রক্ত পরিষ্কার করতে এর ঔষধি গুণ
নিমপাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে থাকে।রক্তের শর্করার মাত্রা কমায়। এছাড়াও রক্তচলাচল বাড়িয়ে হৃৎপিন্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও নিমের জুড়ি মেলা ভার।
পোকা-মাকড়ের কামড়
পোকা মাকড়ে কামড় দিলে বা হুল ফোঁটিয়ে দিলে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।
বাত রোগে ঔষধি গুণ
নিমপাতা ও নিমের বীজ ও বাকল বাতের ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে,বাতের ব্যথায় নিমের তেলের ম্যাসাজও বেশ উপকারী আমাদের জন্য।
চোখের যত্নে নিমের ঔষধি গুণ
চোখে চুলকানি হলে নিমপাতা পানিতে দশ মিনিট সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে নিয়ে চোখে সেই পানির ঝাপটা দিন, আরামবোধ করবেন।
অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় নিমের ঔষধি গুণ
অ্যালার্জির সমস্যায় নিম পাতা ফুটিয়ে গোসল করা ভালো। এছাড়া কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা একসাথে বেঁটে শরীরে লাগালে অ্যালার্জি কমতে সাহায্য করবে।
ব্রণ দূর করতে নিমের ঔষধি গুণ
নিমপাতার গুঁড়ো জলতে মিশিয়ে মুখ ধুতে পারেন। এতে ব্রণ দূর হবে এবং ব্রণ থেকে তৈরি জ্বালাপোড়া ভাবও দূর হবে। এটা ব্রণ দূর করার একটি কার্যকর পদ্ধতি,,
লেখকের মন্তব্য
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url